পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে শিক্ষার আলো যেভাবে ছড়ানো যায়

শেয়ার করুন

মানব জীবনে পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষার আরো বিভিন্ন উপায়। শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যাই শিক্ষা নয় এর জন্য  প্রয়োজন বহিরাঙ্গনের সাথে পরিচিত হবার। একজন ছাত্র তখনই শিক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ন হতে পারবে যখন সে বইয়ের মুখস্থ বিদ্যা ছেড়ে পুরো পৃথিবীর থেকে শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

তাইতো কবি সুনির্মল বসু বলেছেন-

“বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র।”

আমরা নানান উপায়ে শিক্ষা অর্জন করতে পারি। একটা সময় ছিলো যখন স্কুল থেকে ফিরেই দুপুরের রোদ কমার আগেই সবাই খেলার উদ্যেশ্যে মাঠের দিকে ছুটতো। মাঠ যখন সব দখল হয়ে যেতো তখন এলাকার অলি-গলিতে চলতো খেলার পালা। কিন্তু বর্তমান সময়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে স্কুল থেকে ফিরেই একটু ঘুমিয়ে ছুটতে হচ্ছে বিভিন্ন কোচিং বা শিক্ষকের বাসায়, আর উদ্যেশ্য একটাই অন্যকে পরীক্ষার খাতায় ছাড়িয়ে যাবার। আর খেলাধুলা বলতে আটকে গেছে ঘরে বসে কম্পিউটার গেমস খেলার মধ্যেই। এতে করে হয়তোবা পরীক্ষার রেজাল্ট খুব ভালো হচ্ছে, রেজাল্ট আসছে সোনার হরিন অর্থাৎ  জিপিএ ফাইভ এ+ কিন্তু শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ থমকে যাচ্ছে ওই বই-খাতা-কলমের ভেতরই। অথচ ওই কড়া রোদের মাঝে খেলতে ছুটে যাওয়া কিশোর-কিশোরীদের রেজাল্ট কি খারাপ হতো?? না , কারণ তারা বর্তমানের মত এক অসুস্থ ধারায় আটকা পরেনি, তাঁদের পড়াশোনার মাঝে ছিলো বিনোদনের ছোঁয়া।

একটা সময় ছিলো সন্ধাবেলা একদল কিশোর গীটার, ড্রামস নিয়ে বসে পরতো সঙ্গীত চর্চায়, আজ কিন্তু তারা সন্ধ্যা হতেই বই-খাতা নিয়ে বসে পরা ছাত্রদের থেকে সফল। বাংলাদেশের প্রথম সারির যত মিউজিক্যাল ব্যান্ড আছে সেইসব ওই সকল দূরন্ত কিশোরদেরই গড়া, যারা শুধু বই খাতার মাঝে আটকে না থেকে নিজেদের জরিয়েছিলো এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিসের মধ্যে।

আমাদের দেশের অনেক বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী রয়েছেন, যারা শুধুমাত্র দেশেই বিখ্যাতনয়, বরঞ্চ বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশের সুনাম ছরিয়ে আসছেন। অর্জন করেছেন দেশী-বিদেশী অনেক সম্মান ও পুরষ্কার। তারা বাস্তব জীবনেও অনেক শিক্ষিত মানুষজন। কিন্তু তারা নিজেদেরকে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাঝে আটকে না রেখে শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদনের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন গানকে। আর এরই ফল স্বরূপ আজ তারা পেয়েছেন এতো এতো সম্মান।
অভিনয়ের  ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ব এবং পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত জন্ম দিয়েছে অনেকে প্রতিভাবান অভিনয় শিল্পীর। এরা যেমন স্ব স্ব শিক্ষাক্ষেত্রে ছিলেন অসাধারণ আবার তার সাথে অভিনয় জীবনেও ছিলেন দূরন্ত।

 

আমাদের বাংলাদেশে তো ক্রিকেট কতটা জনপ্রিয় খেলা তা তো তোমরা জানোই, তবে এটাকি জানা আছে তাঁদের বাবা-মায়েরা তাঁদের কত কষ্ট করে মাঠ থেকে ধরে নিয়ে আসতেন?? কারণ তারা শুধু বই-খাতার মাঝে নিজেদের আটকে না রেখে নিজ নিজ প্রতিভা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আর তার জন্যই তাঁদের ১১ জন যখন মাঠে খেলে আমরা ১৬ কোটি মানুষ তাঁদের জন্য প্রার্থনা করি, তাঁদের মাঠে দেখতে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করি। তাঁদের এই প্রাপ্তির কারণ জানো?? ওই যে সেই একটাই কারণ, পড়াশোনার পাশাপাশি বিনোদন। তারা পড়াশোনাও করেছেন নিজেদের বিনোদন চর্চাও চালিয়ে গিয়েছেন।

 

আরো পড়ুনঃ পড়াশোনা করার উত্তম সময় কোনটি? রাত নাকি দিন?

 

তোমরা কি জানো একজন সুবক্তা হওয়ার জন্য কি যোগ্যতা লাগে?? এ+ লাগে?? নাহ এটি ভুল , অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে যারা অসম্ভব ভালো রেজাল্ট করেও একজন সুবক্তা হতে পারেনা। এর প্রভাব পরে তাঁদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে। অসম্ভব প্রতিভাবান একজন ছাত্রকে দেখা যায় একজন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে পারছেন না। অথচ ছোট থেকেই যদি পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগীতা, স্ট্যান্ডিং স্পীচের সাথে সে জড়িত থাকতো তাহলে এটি হতো তার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের একটি অতিরিক্ত যোগ্যতা।

শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের মাঝে সীমাদবদ্ব না থেকে তোমরা বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে পারো, যার ফলে আরো জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে। একেকটি গল্পের বইয়ের মাঝেও নানান ধরণের স্থান, কাল, পাত্র স্বম্পর্কে জানা যায়। ভবিষ্যতে নিজেও একজন ভালো লেখক হবার জন্য গল্পের বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। গল্পের বই একটি মানুষের কল্পনা শক্তি বারানোর জন্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি ঘটনা পড়তে পড়তে চোখের সামনে সবকিছুকে কল্পনা করে নেয়া যায় এতে করে যেমন কল্পনাশক্তি বারে তেমনি ভবিষ্যতে নিজে লিখার সময় সাহায্য করে।

কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের জাতীয় কবি। যার কবিতা বাংলাদেশের রণসঙ্গীত। অথচ এই মহান কবি-ই দারিদ্রতার কারণে স্কুল জীবন পার করতে পারেননি। তাই বলে কি তিনি থেমে গিয়েছিলেন? নিজ যোগ্যতার মাধ্যমে তিনি আজ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জাতীয় কবি।

 

পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী, আলবার্ট আইনস্টাইন যাকে কিনা স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো ব্রেইনলেস বলে অথচ পরবর্তিতে তিনিই বিজ্ঞানের এক নতুন পথ প্রদর্শন করে হয়েছেন পৃথিবী বিখ্যাত।

ভারতীয় উপমহাদেশের নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার লিখা গান দুটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়েছে ( বাংলাদেশ ও ভারত) অথচ তিনিও কখনো পুঁথিগত বিদ্যার মাঝে নিজেকে বিলীন করে দেননি। বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার পাশাপাশি তিনি চালিয়ে গিয়েছেন তার কাব্যচর্চা। যার ফলশ্রুতিতে আজ তিনি হয়ে আছেন অমর।

 

এগুলো শুধুই উদাহরণ, এই উদাহরণের মানে এই নয় যে পড়াশোনা করার কোন দরকার নেই, আত্নোন্নয়ন এবং দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই এগুলো শুধু তোমাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য কিছু উদাহরণ। হার না মানার জন্য অনুপ্রাণিত করার জন্য উদাহরণ, শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যায় আটকে না থেকে পুরো পৃথিবীকে দেখার জন্য অনপ্রানিত করার জন্যে এসব উদাহরণ।

শুধু গান, খেলাধুলা, বক্তব্য, গল্পের বই ছাড়াও শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদনের জন্য রয়েছে আরো নানান রকম উপায়। যেগুলো শুধুমাত্র পড়াশোনার মাঝের বিরক্তি কাটায় না তার সাথে একজন ছাত্রর মেধার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে ভালো রেজাল্ট করা মানেই ভালো ছাত্র নয়, তাকেই একজন ভালো ছাত্র বলা যায় যার রয়েছে পুঁথিগত বিদ্যা এবং পুরো পৃথিবীর চারিপাশের শিক্ষার সমন্বয়।

সেজন্য আজ থেকে আমাদের চিন্তা ভাবনার মাঝে পরিবর্তন আনতে হবে। শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার মাঝে নিজেদের আটকে না রেখে শিক্ষার পাশাপাশি নানা-ধরনের বিনোদনমূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে। নিজেদের ভেতর সৃজনশীল শিক্ষার আলোয় ভরিয়ে দিয়ে করতে হবে নিজ মেধার বিকাশ।

এই লিখাটি আপনার ভাল লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের মাঝে। আপনার এই শেয়ার আরো একজনের উপকার হতে পারে। কমেন্ট করে জানাতে পারেন আপনি কি বিষয়ে আর্টিকেল চান। আমরা আপনার পরামর্শকে সম্মানের সাথে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

ভাল থাকবেন সবসময়। সবার জীবন অনেক সুন্দর হউক।


শেয়ার করুন

Leave a Comment