বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তারা প্রহর গুণছেন এখন ভাইভা পরীক্ষায় শরিক হওয়ার। অনেক কষ্টে তো প্রিলিমিনারি এবং লিখিত পরীক্ষা পার হয়েছেন। এই শেষ ধাপটা এবারে সাফল্যের সাথে উতরে যেতে পারলেই সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সুযোগ। তাই ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতিটা ভালোমতো হওয়া দরকার। এই লেখাতে ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই আলোচনা করা হলো।
ভাইভা মূলত একটি ইংরেজী শব্দ। ভাইভার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা। আর মৌখিক পরীক্ষার ইংরেজি প্রতিরূপ ‘Vivavoce’ যার adjective form হচ্ছে Vivacious’. এর অর্থই হচ্ছে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া বা প্রাণবন্ত হয়ে নিজেকে উপস্থাপন করা।
লিখিত পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব যাচাই করা যায়না বা পুরোপুরিভাবে পরিস্ফুট হয়না।তবে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব, উপস্থিত বুদ্ধিুজ্ঞান,মার্জিত রুচিমান,ভদ্রতাব্যঞ্জক কথা বলার ভঙ্গি, আচার আচরণ এর শালীনতা এ- সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হয়। ভাইভা বোর্ডে পাঠ্য বই জ্ঞান যতটা না জিজ্ঞেস করা হয়, তারচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা হয় বাকি বিষয়গুলোর প্রতি।এ জন্য পাঠ্যজ্ঞান ছাড়াও নিতে হবে সার্বিক প্রস্তুতি।
মৌখিক বা ভাইভা পরীক্ষা কেন্দ্রিক এই প্রস্তুতিকে দুই ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
- পড়ালেখার প্রস্তুতি
- অন্যান্য প্রস্তুতি
যা যা থাকছে
ভাইভার জন্য পড়ালেখাঃ
সাধারণত যেহেতু মৌখিক পরীক্ষার আগে থিউরি পরীক্ষা হয়ে যায় তাই ভিন্নভাবে মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়না। তাছাড়া অল্পকিছু দিন সময়ের ভেতর সব বিষয় পড়াও সম্ভব নয়। ভাইভাতে প্রত্যেক বিষয় বা কোর্স সম্পর্কে conceptual প্রশ্ন করা হয়। তাই Conceptual বিষয়গুলোতে মনোযোগ সহকারে চোখবুলিয়ে নেয়া বা রিভাইজ করা এবং মেডিটেটিভ লেভেলে প্রত্যেকটা কোর্সের Conceptual বিষয়গুলো ভিজুয়ালাইজ করা। ভাইভাতে যে প্রশ্নগুলো করা হয়, তা হলো কোনো থিউরির এপ্লিকেশন কী ধরনের।
যেমন, নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের প্রয়োগ। যখন ছাত্রছাত্রীরা conceptual বিষয়বস্ত্ত পারে না, তখন সংজ্ঞা, পার্থক্য এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়।তাই সংজ্ঞাজাত বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়া এবং খোলাচক্ষে দেখতে একই এসব বিষয়ের মাঝের পারস্পারিক পার্থক্য ভালভাবে আয়ত্ব করাও অতীব জরুরি।
আরো পড়ুনঃ মনকে নিয়ন্ত্রণ করার ১০টি সেরা কৌশল
তবে এ ক্ষেত্রে কৌশলগত কিছু পয়েন্ট আছেঃ
• যদি প্রতি বছরের শেষাংশে ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে উক্ত বছরের যাবতীয় কোর্সগুলো রিভাইজ করা।
• চার বছর পরবর্তী অনার্স বা বিবিএ-র শেষে যে ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়, তখন বিগত বছরগুলির গুরুত্বপূর্ণ কোর্সগুলোর মৌলিক প্রসঙ্গ গুলো রিভাইজ করা।
• যদি জানা সম্ভব হয় যে, ভাইভা বোর্ডে কারা কারা চেয়ার করবেন বা কারা পরীক্ষা নেবেন, তখন উনারা যে যে বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, ঐ সমস্ত বিষয়াবলী নিয়ে একটু পড়াশোনা করা। অথবা সেই স্যার বা ম্যাডাম যদি এর আগে কোনো কোর্স পড়িয়ে থাকেন তাহলে সে কোর্সগুলোর ধারণা নিয়ে নেওয়া।
ভাইভার জন্য অন্যান্য প্রস্তুতিঃ
ইন্টারভিউর সফলতা একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য অপরিহার্য একটি অধ্যায়। তাই ইন্টার্ভিউ চলাকালীন সময় এবং ইন্টার্ভিউর পূর্বে প্রার্থী কে অবশ্যই কয়েকটি বিষয়ে সন্তর্পিয়া থাকতে হবে, যাতে ভাইভাটা সবদিক থেকে সাফল্য মন্ডিত হয়।নিম্নে ভাইভা প্রস্তুতি মূলক আবশ্য পালনীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো যা একজন চাকরি প্রার্থীর
সফলতা অর্জনের জন্য অপরিহার্যঃ
পোষাক নির্বাচনঃ
একজন পরীক্ষার্থী কে মনে রাখতে হবে পরীক্ষার দিন তার জন্য শো-অফ এর দিন।তাই তাকে যথা সম্ভব সুন্দর, পরিপাটি, মার্জিত পোষাক পরিধান করতে হবে।এ ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য ফুল হাতার শার্ট হতে পারে প্রথম পছন্দ।আর কালার বাছাইয়ে এক কালারের হালকা রঙএর শার্ট বাঞ্ছনীয়।এ ক্ষেত্রে কালো বা সাদা রাখা যেতে পারে বাছাইয়ের মধ্যে।আর মেয়েদের ক্ষেত্রে সিম্পল কালারের শাড়ী হতে পারে অন্যতম পছন্দ।
আরো পড়ুনঃ ইতিবাচক চিন্তা করার সহজ কৌশল
খুঁটিনাটি কিছু প্রস্তুতিঃ
ভাইভাতে মাঝেমাঝে জীবন বৃত্তান্ত পেশ করার প্রয়োজন পড়ে তাই তাই পুর্ব হতেই সুন্দর শুদ্বরূপে নিজের জীবন বৃত্তান্ত তৈরি করে রাখা।পরীক্ষাগৃহে প্রবেশের পূর্বে মুঠোফোন বন্ধ/সাইলেন্ট করে নিবে।কক্ষে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি নিয়ে সালাম/নমস্কার করে প্রবেশ করবে।মুদ্রাদোষ সম্পর্কে সচেতনতা বজায় রাখবে।আঞ্চলিকতা পরিহার করতে হবে।
নিজেকে উপস্থাপনঃ
পরীক্ষার্থী কে অবশ্যি আত্নবিশ্বাসি হতে হবে।নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে স্পষ্টীকরণ করে-আকর্ষণীয় ভাবে। নিজেকে পেশ করবে সতেজ-সবল সাবলীল ভঙ্গিতে।কোনরুপ হীনমন্যতায় ভুগা যাবেনা।নিজের মাঝে ক্লান্তিকর কোন ভাব রাখা যাবে না।
বসার ক্ষেত্রে করণীয়ঃ
পরীক্ষক দের সামনে মার্জনীয় ভঙ্গীতে বসবে।পায়ের উপর পা উঠিয়ে দিয়ে বা দম্ভ প্রদর্শন পূর্বক বসবেনা।দুহাত টেবিলের উপর রাখবেনা।উত্তর প্রদানের সময় কেবল প্রশ্নকর্তার দিকে তাকানো অন্য পরীক্ষক দের দিকে না তাকানোই ভালো।
মনোযোগ দিয়ে প্রশ্নটি শুনা ও বোঝার চেষ্টা করুন। প্রথমবারে যদি প্রশ্নটি বুঝতে না পারেন তবে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আর একবার প্রশ্নটি করতে বলা।
আরো পড়ুনঃ সন্তানের সাফল্যের জন্য বাবা-মায়ের যা করণীয়
উত্তর দেয়ার সময় প্রত্যেকটি শব্দ স্পষ্ট করে এমনভাবে উচ্চারন করা যেন সবাই শুনতে পায় এবং লক্ষ্য রাখা উত্তরের সাথে যেন আপনার আত্মবিশ্বাস প্রতিফলিত হয়। সময় নষ্ট না করে উত্তর দিন। জানা না থাকলে কালক্ষেপন না করে দ্রুত বলুন, দুঃখিত আমার জানা নেই। অগোছালো ভাবে এদিক সেদিক না ঘুরিয়ে যথাযথ উত্তর দিতে হবে। যুক্তির সাথে বক্তব্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সুস্পষ্ট শুদ্ধ ভাষায় বলবে। ইংরেজি পরিভাষা ব্যবহার করা এতে বক্তব্যর মান বাড়বে।
কোনরুপ মিথ্যার আশ্রয় না নেয়া।বিনয়ের সাথে কথাবার্তা বলা।অপ্রাসঙ্গিক কোন কথাবার্তা না বলা।
সর্বশেষ কথা হলো একজন পরীক্ষার্থী যথাসম্ভব চেষ্টা করবে নিজেকে সবার চেয়ে সেরা ভাবে উপসস্থাপন করা।বিচারকদের আস্থা অর্জন করা যে তুমি অন্যদেরচে আলাদা এবং এ কাজের জন্যই তুমিই একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি। তাই উপরোক্ত থিওরি গুলো ফলো করলে আপনার জীবনে আসতে পারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।হয়তবা জীবনের সেরা সাফল্য।