আত্মবিশ্বাস শুধু একটি শব্দ নয় এটি আমাদের জীবনের মূল খুটি। আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে গেলে আমাদের জীবনটাও নড়বড়ে হয়ে যায়। আত্মবিশ্বাসের শক্তি অনেক। এটি এমন এক শক্তি যা আমাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতিও সহজ ভাবে মোকাবেলা করার অনুপ্রেরণা জোগায়। যেই অনুপ্রেরণা আপনাকে সাফল্যের শীর্ষচূড়ায় পৌঁছে দিতে সহয়তা করে।
আত্মবিশ্বাসী মানুষরা কখনো কাজে ব্যার্থতার স্বাদ পায় না। তারা নিজের উপর বিশ্বাস রেখে চেষ্টার অন্তিম পর্যায়ে গিয়ে ছিনিয়ে আনে সাফল্য। তারা হার মেনে নেয় না। হোচট খেয়েও আবার উঠে দাঁড়িয়ে চালায় সাফল্য লাভের সংগ্রাম।
অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসের অভাব আমাদের ভিতরের অনেক সম্ভাবনাকেই কুড়িতে ঝড়িয়ে দেয়। নিভিয়ে দেয় আপার সৃষ্টির সম্ভাবনা। যার ফলে জীবনে অনেক সংকল্প অসম্পূর্ণই থেকে যায়। আর এর কারনেই মানুষ হিসেবে আমরা নিজেকে আবিষ্কার করি ব্যার্থ হিসেবে। তাদের আত্মবিশ্বাসের খুটিই নড়বড়ে হয়ে যায় তাই তারা হতাশায় ভোগে।
নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং কর্মক্ষেত্রে হয় ফলশূন্য। তাই জীবনকে সঠিক পদে পদার্পণ করাতে হলে আমাদের প্রত্যেকেরই আত্মবিশ্বাসের অধিকারী হতে হবে। কেননা এই আত্মবিশ্বাস আপমাকে সকল ক্ষেত্রেই জয় ছিনিয়ে এনে দেবে। তবে আমরা অধিকাংশ মানুষই আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগি। তবে আত্মবিশ্বাসকে কিভাবে ফিরিয়ে আনতে হয় সেটা জানি না।
মনে রাখতে হবে আত্মবিশ্বাস অর্জন করা কোন রাতারাতি ব্যাপার নয়। আপনার দীর্ঘদিনের চর্চা এবং অভ্যাসে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। আত্মবিশ্বাস কেউ কাউকে দিতে পারে না নিজে নিজেই অর্জন করতে হয়।
নিচে আত্মবিশ্বাস অর্জন করার ১০ টি কৌশল দেওয়া হল। এই কৌশলগুলো সঠিকভাবে আয়ত্ত করলে আপনার আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
যা যা থাকছে
১। নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করুন
স্মার্ট পোষাক, পরিচ্ছন্নতা, হালকা সুগন্ধি আপনার স্মার্টনেস কেবল অন্যের চোখেই না, আপনার নিজের চোখেও নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। নিজের কাছেই যদি নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মনে না হয় তাহলে মানুষের কাছে কিভাবে আত্মবিশ্বাসী ভাব ফুটিয়ে তুলবেন।
খেয়াল করে দেখবেন নিজেকে যেদিন সুন্দর লাগে সেদিন আমাদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকে। তাই কোন কাজে বের হওয়ার আগে নিজের পিছিনে ১০ মিনিট বেশি ব্যয় করুন। দেখবেন সারাদিন নিজেকে প্রেজেন্টেবল আর আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। আপর দিকে আপনি যদি নিজেকে খারাপভাবে সাজান যেমন পোশাক পরিধানে মাধুর্য না থাকে, চুল এলোমেলো থাকা, ইত্যাদি।
তাহলে নিজেত কাছেই নিজের ভালোলাগাটা কাজ করে না। যার ফলে আপনার মনে বিরূপ প্রাভাব পরে এবং আপনার আত্মবিশ্বাসটা ভেতর থেকে হারিয়ে যায়। তাই নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করতে হলে প্রথমে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করা জরুরী।
২। নেতিবাচক মন্তব্যে প্রভাবিত হবেন না
আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই আমরা নেতিবাচক কথায় প্রভাবিত হই বা মনে মনে কষ্ট পেয়ে থাকি। আর এই নেতিবাচক মন্তব্য আমাদের মনের ভিতরে পুষে রাখি যেটা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়। আর বেলা শেষে আমারা আমাদের নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতিটা করে বসি।
তাই সহকর্মী বা বসের নেতিবাচক কথা মনে ধরে রাখবেন না। কেননা একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ কেউ প্রশংসা করে আবার কেউ ভুল ধরিয়ে দিয়ে কাজ আদায় করতে চেষ্টা করেন। তাই বুঝতে চেষ্টা করুন আপনার বিসের মানসিকতা কেমন।
হয়তো তিনি আপনার সম্পর্কে নান নেতিবাচক কথা বলেছেন আপনার কাছ থেকে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ আদায় করে নিতে। আর সেটা কি আপনার যোগ্যতার কারনেই নয়? তাই চেষ্টা করুন আপনার ভুলগুলো শুধরে নেয়ার। তাতে করে আপনার আত্মবিশ্বাস অটুট থাকবে এবং কাজের ক্ষেত্রেও সাফল্য পাবেন।
৩। চাপকে দূরে রাখুন
চাপ কম বেশি আমাদের সবার জীবনেই আসে। এটা হতে পারে কাজের ক্ষেত্রে, পড়ার ক্ষেত্রে বা অন্য কোন ক্ষেত্রে। এই কাজের চাপ আমাদের মানসিক চাপে রুপান্তির হয়। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং আমাদের আত্মবিশ্বাসকে গুড়িয়ে দেয় ।
যার ফলে কাজটা করার ক্ষেত্রে আমাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়, অনুপ্রেরণায় ব্যাঘাত ঘটে ফলশ্রুতি আমাদের কাজটাই সম্পন্ন হয় না। তাই কাজের চাপকে দূরে রাখতে হবে।
নিজের কাজকে বোঝা হতে দিবেন না। কার্য তালিকায় এমন কিছু কাজ অন্তর্ভুক্ত করুন যেই কাজ আপনাকে আনন্দ দেয়। তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। আপনি অনুপ্রেরণা পাবেন কার্য সম্পাদন করার।
আরো পড়ুনঃ সমালোচনা এড়িয়ে চলার সহজ কৌশল
৪। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন
আমাদের প্রায়শই চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারি না। তবে কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটা হয়ত আমরা কম সংখ্যক মানুষই জানি।
তাই যখনই কারো সাথে কথা বলবেন তার চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। কথা বলার সময় এদিক ওদিক তাকাবেন না বা অন্য কিছু করবেন না।
তাতে করে আপনার সাথে কথক আপনার সাতগে কথা বলে আরাম পাবে। আর চোখে চোখ রেখে কথা হলা আত্মবিশ্বাসী হবার একটি অন্যতম চিহ্ন।
৫। মনযোগ দিয়ে শুনুন, তারপর বলুন
নিজের ভ্যালু ক্রিয়েট করতে আপনাকে ভালো শ্রোতা হতে হবে। মনযোগ সহকারে শুনে, প্রত্যেকটি কথা উপলব্ধি করে তারপর উত্তর দিতে হবে। যার ফলে বক্তার আপনার সম্পর্কে উচ্চ ধারনা তৈরী হয় যেটা আপনার আত্মবিশ্বাসকে শান দিতে সহয়তা করে।
তাই কেউ যখন আপনার সাথে কথা বলছেন তখন তার কথার মাঝখানে কথা বলবেন না বা প্রশ্ন করবেন না। তাহলে সে বিরক্ত হবে। তাই আগে শুনুন এতে তিনি ভাববেন আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং তখন তিনিও আপনার কথা শুনতে আগ্রহী হবেন।
আর কেউ যখন আপনার কথা মনযোগ দিয়ে শুনে তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বাড়বে। তাই শুধু বলে যাওয়া অভ্যাসটাকে পরিত্যাগ করুন আর মনযোগ দিয়ে শুনে তারপর বলার অভ্যাসটি রপ্ত করুন।
৬। নিজেকে দোষারোপ করবেন না
আমরা এই ভুলটা প্রায় শতকরা ৯০% মানুষই করে থাকি। আমাদের পরিস্থিতি আমাদের হাতের নাগালে গেলেই নিজেকে দোষারোপ করি। পদক্ষেপে সামান্য গড়মিল হলেই আমরা আশাহত হয়ে নিজেকে দোষারোপ করতে ভুলি না। আর এর ফলে আমাদের আত্মবিশ্বাসকে চুরমার করে ফেলি।
হারিয়ে ফেলি অনুপ্রেরণা! যে দুইটি উপাদান নিয়েই সাফল্যের মূল ভিত্তি গঠিত হয়েছে। আমরা সাফল্যের বিশাল সংখ্যক সিঁড়ির একটাতে হোচট খেয়েই আটঘাট বেধে নিজেকে দোষারোপ করা শুরু করে দেই। আর আত্মবিশ্বাস আমাদের দেহ ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই কাজটা আর করা হয়ে উঠে না।
উঠলেও ব্যার্থতার তকমা কপালে লেপতে হয় কেননা আত্মবিশ্বাস ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়। তাই মনে রাখবেন, আপনি সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু করতে পারবেন না। পরিস্থিতি নাগালেত বাইরে চলে গেলে নিজেকে দোষ দিবেন না তার চেয়ে বরং আত্মবিশ্বাসের সহিত ভাবুন আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে।
৭। নিজের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলবেন না
নিজেই যদি নিজের সম্পর্কের নেতিবাচক দিক ফুটিয়ে তোলেন তাহলে অন্য মানুষও আপনার নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কথা বলার সাহস পাবে।
যেমন, আমি খুব অগোছালো, ডেডলাইন ছুঁতে পারি না, ধীরে কাজ করি, অন্যদের মত ভালো প্রেজেন্টেশন করতে পারি না, ইত্যাদি নিজের নেতিবাচক দিকগুলো কখনোই কর্মস্থলে বলা যাবে না।
বরং আপনার উচিৎ হবে নিজের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা, এতে করে যেমন আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে তেমনি আপনি আপনার ককর্মস্থলে গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ মন ভাল করার ১০টি সেরা উপায়
৮। ছোট এবং সহজ লক্ষ্য নির্ধারন করুন
একেবারে বড় এবং খুব কঠিন লক্ষ্য নির্ধারন করলে সেই লক্ষে পৌছতে অনেক চড়াই উতড়াই পেরুতে হয়। দেখা দেয় ব্যার্থতার সম্ভাবনা। ব্যার্থ হওয়ার ঝুকি থাকে অনেক। আর কাজে ব্যার্থ হলে আমাদের মনবল ভেঙ্গে পরে, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। আর আত্মবিশ্বাস হল সাফল্যের মেরুদণ্ড।
মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেলে যেমন মানুষ দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গেলে সাফল্যের দেখা পাওয়া যায় না। তাই আত্মবিশ্বাস কে ধরে রাখতে বড় লক্ষ্যকে জয় করার জন্য কিছু ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরী করে নিতে হবে। আর সেই ছোট লক্ষ্যে সাফল্য পেলে আমাদের আত্মবিশ্বাসের মাত্রা বারবে এবং পরের লক্ষে পৌঁছাতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
আর এভাবে আমরা এই ছোট ছোট লক্ষ্যকে সিঁড়ি বানিয়ে পৌঁছে যাবো সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। আর তখন আত্মবিশ্বাসটা কোথায় থাকবে ভেবে দেখুন।
৯। আগ্রহের জায়গায় দক্ষতা বাড়ান
নিজের আগ্রহ বা ভালোগার জায়গায় নিয়ে চর্চা করুন। ভাষা, পড়াশোনা বা প্রযুক্তি যেখানেই আপনার আগ্রহ থাকুক না কেন, সেই ক্যাটাগরিতে নিজের দক্ষতা বাড়ান। তাহলে আপনার জ্ঞানের ভান্ডার এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, যুক্ত হবে জ্ঞান নামক বইতে আরেক অধ্যায়।
যেই জ্ঞানের অধ্যায় আপনার ক্ষতি করবে না। কেননা জ্ঞান কখবো অপচয় হয় না বরং এই জ্ঞান নিঃসন্দেহে আপনার পেশাদারী আত্মবিশ্বাসে নতুন একটি পালক যুক্ত করবে।
এবং আপনার চলার পথে সহয়তা করবে। তাই নিজের আগ্রহের জায়গাটা আজই খুজে বের করুন। আর সেখানে আপনার দক্ষতার পরিচয় তৈরী করতে ভুলবেন না।
১০। নিজের প্রপ্তি ও অপ্রাপ্তি গুলো লিখে ফেলুন
আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই কেবল নিজের অপ্রাপ্তি নিয়ে হয়াশায় ভোগে। কে কি পেল না সেটা নিয়েই মানুষের যত কষ্ট। আর এভাবেই অপ্রাপ্তি গুলো নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমাদের দেহে হতাশা নামক রোগ বাসা বাধে। এরপর জীবনের প্রতি একটা অনিহা চলে আসে। বেচে থাকার মজাটাই শেষ করে ফেলে।
আফসোস করতে করতেই জীবনের মূল্যবান সময়গুলো শেষ করে দেয়, সাথে আত্মবিশ্বাসটাকেও দুমড়ে মুচড়ে দেয়। কিন্তু আমরা যদি আমাদের অপ্রাপ্তিগুলোর সাথে সাথে আমাদের প্রাপ্তির দিকে তাকাই তাহলে দেখবেন অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির সংখ্যাটি অনেক বেশি। তাই অপ্রাপ্তির আগুনে না পুড়ে প্রাপ্তির সুখে গা ভাসানোটাই শ্রেয়। তাই নিজের প্রাপ্তি নিয়ে ভাবুন।
লিখে ফেলুন একটি ডায়েরিতে আগামীর লক্ষ্যও। দেখবেন হারানোর চেয়ে অর্জন আর সম্ভাবনায়ই ভরে উঠেছে আপনার খাতা ও মন। আর আত্মবিশ্বাস হবে টইটুম্বুর।
উপরক্ত বিষয়গুলো ধীরে ধীরে রপ্ত করতে পারলে আপনার জীবনে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেবে না। যেটাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাবেন চলার পথে। আপনার জীবন ভরে উঠুক সাফল্যের উৎসবে, এইটাই আমাদের একান্ত কামনা।