বাবা-মা কে খুশি রাখার ১০টি উত্তম উপায়

শেয়ার করুন

বাবা-মা আমাদের অমূল্য সম্পদ। এ কথাটি আমরা সবাই মানলেও সবাই কি সে অনুযায়ী কাজ করি? হয়ত না । নিজের গার্লফ্রেন্ডকে খুশি করতে অনেকেই হয়ত অনেক কিছু করে ফেলেছেন। তাকে কিভাবে খুশি রাখা যায়, কি করলে সে খুশি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তেমনি বন্ধুবান্ধবদের খুশি করতেও কত কি না করেন। তাদের জন্মদিন থেকে শুরু করে নানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় মনে রেখে তাদের চমকে দেন।

কিন্তু আমি যদি এখানে ছোট্ট একটা প্রশ্ন জুড়ে দেই, “বাবা-মাকে কয়বার খুশি করার চেষ্টা করলেন?” আপনি হয়ত এখন গোনার চেষ্টা করবেন। কিন্তু যদি মনে করেন গুনে বের করা যাবে তাহলে কিছুটা লজ্জার ব্যাপার হবে বটে।

এই পৃথিবীতে বাবা মায়ের চাইতে আপন কি কেউ আছে? বাবা-মা তো সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় উপহার। যাদের ঘিরেই আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপ।

বাবা-মা আমাদের ছোট থেকে বড় করেছেন। সারা জীবনের প্রতিটি মুহুর্তও যদি আমরা তাদের সেবায় ব্যায় করি তাতেও হয়তো তাদের প্রতি আমাদের যে ঋণ তা পুরণ হবে না। তবে যারক আমাদের খুশির জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন জীবনের এতো গুলো বছর তাদের খুশি করার কথা ভেবেছেন কখনো?

জীবনের নানান ব্যস্ততায় বাবা-মায়ের খুশির কথা আমরা হয়তো ভুলেই গিয়েছি। কিন্তু ভেবে দেখুন তো তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে কেমন লাগবে আপনার? বাবা-মা কে খুশি করতে খুব বেশি কিছুই করার প্রয়োজন নেই। তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য শুধু একটু ভালোবাসাই যথেষ্ট।

নিচের ১০টি উপায় সঠিকভাবে পালন করলে আপনিও হতে পারবেন আপনার বাবা-মায়ের ঠোটের কোনের এক চিলতে হাসির কারন।

যা যা থাকছে

১। প্রাপ্য সম্মান দিন

জীবনে মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কারণে অকারণে, বিভিন্ন সময়ে আমরা তাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি। তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতেও আমরা কার্পন্ন করেছি। অথচ অফিসের বসকে দেখলেও আমরা ১০ বার সালাম ঠুকি। নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য আমাদের মধ্যে সম্মন দেয়ার জোয়ার উঠে।

কিন্তু বাবা-মা এর ক্ষেত্রে কখনই এরকম হয়ে উঠে না। অথচ তারাই আমাদের সম্মানের সর্বচ্চো অধিকারী। আমাদের সর্বচ্চো সম্মানটুকু তাদেরই প্রাপ্য। তাই বাবা মাকে সম্মান দিন। তাহলে তাদের মন খুশিতে ভরে উঠবে।

২। সদাচারণ করুন

বাবা-মায়ের সাথে সদাচারন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের প্রত্যেকেরই তাদের সাথে ভালো আচরন করা দরকার।

কিন্তু চরম দুঃখের ব্যাপার এই যে, বাবা মাকে গালি দেওয়া কিংবা তাদের তুই তুকারি করে কথা বলা অনেকটাই এ যুগের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বিবেক আজ কতটা নিচে নেমে গেছে। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাথেই কিনা আমরা খারাপ আচরণ করি! যারা না থাকলে আমরা পৃথিবী নামক সুন্দর গ্রহের দর্শনই পেতাম না।

তাদের সাথে খারাপ আচরণ করলে, খারাপ ব্যাবহার করলে তারা মনে অনেক কষ্ট পায়। বাবা মায়ের মনে কষ্ট দেওয়া অবশ্যই সন্তানের কাম্য নয়। তাই অনুগ্রহ করে বাবা মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন। তাদের সাথে সব সময় ভালো ব্যাবহার করুন। মার্জিত ভাষায় নিচু স্বরে কথা বলুন। তাহলে তারা খুশি হবে।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে সবসময় হাসি-খুশি থাকা যায় – উপভোগ করুন প্রতিটি মুহূর্ত

 

৩। সর্বদা সত্য বলুন

সত্য বলাটা পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে একটি। সবাই সত্য বলতে পারেনা। আপনি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। প্রতিজ্ঞা করুন কখনো বাবা-মাকে মিথ্যা বলবেন না। যদি নিজের বাবা-মাকেই মুখ ফুটে সত্য কথা বলতে না পারেন তো কাকে বলবেন? কারা আপনার এতোই প্রিয় যাদের কাছে সত্য কথা শেয়ার করা যায় কিন্তু বাবা-মার কাছে যায়না?

যাদেরকে আপনি এতো প্রিয় ভাবছেন কিছুদিন তাদেরকে এড়িয়ে চলে দেখুনতো। কয়েকদিন তাদের ফোন ধরবেন না, মেসেজের রিপ্লাই দিবেন না। সবরকম যোগাযোগ বন্ধ। কিছুদিন সে নিজে থেকে খোজ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু একসময় হাল ছেড়ে দিবে। কিন্তু বাবা-মা ! কক্ষনো না ! তারা প্রতিদিন প্রতিটা মুহুর্ত আপনাকে নিয়ে ভাবে।

তাদের এই ভালোবাসার মূল্যায়ন করুন। তাদের সাথে সবসময় সত্যি কথা বলুন। ভুলবশত যদি কোন খারাপ কাজ করেই ফেলেন তাহলে বলে ফেলুন সত্যটাই। সত্য বলার ফলে তাদের আপনার উপর বিশ্বাস স্থাপন হবে। এবং সেই সাথে তারা হাসি খুশি ও থাকবে।

 

৪। বিশেষ দিনগুলো মনে রাখুন

আমাদের প্রায় সবারই আমাদের বন্ধুবান্ধবদের বিশেষদিনগুলো একেবারে ঠোঁটাস্থ বলা চলে। এতে করে আমাদের বন্ধুরা অনেক খুশি হয়।

ঠিক তেমনি ভাবে বাবা-মায়ের জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকীও মনে রাখুন। এবং এইসব দিনগুলোতে তাদের চমকে দিন। এমন কিছু করুন যার রেশ অনেকদিন থাকে। এর ফলে তারা সারপ্রাইজড হবে এবং আপনার এই কান্ডের জন্যে তাদের মন খুশিতে ভরে উঠবে।

৫। প্রশংসা করুন

বাবা মায়ের প্রশংসা অনেকেই করতে পারেন না লজ্জায়। তাই অনেকের কাছেই এটা লজ্জার ব্যাপার হতে পারে। বাবা-মার প্রশংসা করতে লজ্জা করা ঠিক না। লজ্জাকে এড়ানোর চেষ্টা করুন আর তাদের প্রশংসা করুন। ধরুন আপনার মা আজকে যা রান্না করেছিলো সেটা স্বাদে-গন্ধে একদম সেরকম হয়েছে ! সরাসরি তাকে বলুন যে তার রান্নাটা খুব ভালো হয়েছে।

আপনার বাবা ব্যবসায় বড় কোন সাফল্য অর্জন করেছে। সেজন্যে তাকে প্রশংসা করুন তার বিচক্ষণতার জন্যে, তার কঠোর পরিশ্রমের জন্যে। কোন কাপড়ে তাদের দেখতে সুন্দর লাগলে সেটাও বলতে ভুলবেন না। আপনার সামান্য একটু প্রশংসা হয়তো তাদেরকে সমস্ত দিনের জন্যেই খুশি রাখতে যথেষ্ট!

৬। তাদের কথার মূল্যায়ন করুন

আমাদের সব সময়ই বাবা-মায়ের কথা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। কেননা বাবা-মা আমাদের ভালো চায়। তারা আপনার যতটা ভালো কামনা করে, পৃথিবীর অন্যকেউ সেইটা করে না। আর যদি আপনার মনে হয় কেউ করে তাহলে আমি বলন আপনি সম্পূর্ণ ভুল। বাবা-মা যা বলে আপনার ভালোর কথা চিন্তা করেই বলে।

আর যদি আপনার মনে হয় তারা ভুল করছেন, তাহলে রেগে যাবেন না। শান্ত থাকুন, হাসিমুখে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। হয়তো তারা বুঝবে। তবে এরপরও যদি তারা নিষেধ করেন এবং সেটা যদি ক্ষতিকর না হয় তাহলে তাদের কথা শুনুন।

তারা আপনার ভালোর কথা ভেবেই আপনাকে কিছু বলেছেন। আর আপনি যদি তাদের মতামত গ্রহন করেন তাহলে তারা খুশি হবে।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে বিস্তারিত

 

৭। সংসারের প্রয়োজনে তাদের সাহায্য করুন

বাবা-মা সংসারের জন্যে সারাদিন খাটা খাটনি করেন। আমাদের ভালো রাখার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন। অথচ আমরা নিজের ঘরে বসে আরামে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকি।

কোন প্রয়োজনে তারা আমাদের কাজ করতে বলতে আমরা নানা অজুহাত দাড় করিয়ে দেই। কি অদ্ভুত! যেখানে আমাদের তাদেত কষ্টটাকে একটু কমানোর জন্য নিজে থেকেই এগিয়ে যাওয়া উচিৎ চিল সেখানে আমরা নানা অজুহাত দাড় করাচ্ছি। তাতে করে আমাদের পিতা-মাতার কষ্টটা বেড়ে যায়।

অপর দিকে আমরা যদি অজুহাত না দিয়ে তাদের কাজে একট সহায়তা করি তাহলে তাফের কষ্টটা খানিক হলেও কমে যায়। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ বাবা-মায়ের কাজে সাহায্য করা।

৮। অপরিচিত এবং আত্মীয়দের সামনে তাদের লজ্জায় ফেলবেন না

আমরা নিজের অজান্তেই এসব কাজগুলো করে ফেলি। বাবা-মার কথায় ভুল ধরা কিংবা তাদের কোন ভুলের জন্যে তাদেরকে সবার সামনে লজ্জায় ফেলে দেয়া অনেক গর্হিত কাজ।

আপনি পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করেছেন। আর এজন্যে আপনার বাবা আপনাকে আপনার স্যারের সামনে বকা-ঝকা করছে, বুঝাচ্ছে। হঠাত আপনি বললেন, “বাবা তুমি তো তোমার সময়ে এই পরীক্ষায় ফেল করেছিলে”। এটা খুবই খারাপ কাজ হবে। এটা একটা উদাহরণ ছিলো মাত্র।

এমনই অনেকভাবে বাবা-মাকে মানুষের সামনে আমরা লজ্জায় ফেলে দেই। এমনটা করা যাবেনা, কথা বলার সময় সতর্ক থাকা উচিৎ। তাদের বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সাথে মার্জিত ব্যবহার করুন। কারো সাথে কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার করবেন না। তাদের সাথে নতুন কোথাও গেলে যথাসম্ভব ভদ্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

এছাড়াও অন্য যে কাজগুলো করলে আপনার বাবা-মা লজ্জায় পড়তে পারেন সেগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন।

৯। তাদের নিত্য নতুন বিষয় শেখান

এই বিষয়টি হয়ত অনেকে অবাক করবে, আবার ঘাবড়েও দিতে পারে। কিন্ত এটা আপনার বাবা-মাকে বেশি মাত্রায় খুশি করতে সক্ষম। কেননা এ বয়সে তারা একই জিনিস করতে করতে নিজেদের মধ্যে এক ধরনের একঘেয়েমি ভাব চলে আসে। তাই তাদেরও নিত্য নতুন জিনিশ সম্পর্কে আগ্রহ জন্মায়।

ছোটবেলায় যেমন তারা আপনাকে কথা বলতে শিখিয়েছে, লেখাপড়ায় হাতেখড়ি দিয়েছে, চারপাশের বিষয়াদি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে তার সমতুল্য কিছুই আপনি তাদের দিতে পারবেন না। কিন্তু আপনি তাদেরকে এমন কিছু শেখাতে পারেন যেগুল আপনি ভালো বুঝলেও তারা বুঝতে পারলে খুশি হবেন।

আপনার বাবা-মা হয়তো জানে না ফেসবুক কি, একদিন তাদেরকে আপনার পাশে বসিয়ে বোঝান ফেসবুক সম্পর্কে। তাদেরকে একটা পরিষ্কার ধারণা দিন। দেখবেন তাদের অনেক ভুল ধারণা দূর হয়ে গেছে। পাশাপাশি তারা খুশিও হবে। তাদেরকে মোবাইলের বিভিন্ন ফাংশন বোঝাতে পারেন।

কিভাবে মোবাইলে মেসেজ পাঠাতে হয় তা অনেকের বাবা-মাই হয়তো জানেন না। তাদেরকে সেটা শেখাতে পারেন। প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় শেখানোর পাশাপাশিও আপনি আরও অনেক বিষয় তাদেরকে শেখাতে পারেন। তাহলে তাদের একঘেয়েমিটা কেটে যাবে এবং সবসময় তারা খুশি থাকবে।

১০। তাদের সময় দিন

আমরা আমাদের প্রায়শই আমাদের কাজের জন্যে বাবা-মাকে সময় দিতে পারি না। আস্তে আস্তে তাদের।সাথে আমাদের সম্পর্কটা হালকা হয়ে পরে। যার ফলে তারা একাকিত্বে ভোগেন। যার ফলশ্রুতি তাদের মন খারাপ থাকে সব সময়। এবং তাদের মনে আপনাকে নিয়ে আক্ষেপ তৈরী হয়।

তাই নিজেদের হাজারো কাজের ভীড়েও বাবা মার জন্যে সময় বের করতে হবে। তারা যেন নিজেদেরকে কখনো নিগৃহীত মনে না করেন। তাদের সাথে মন খুলে কথা বলুন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। অনেকেই আছে যারা নিজের বাবা মাকে সেকেলে মনে করেন।

কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখা জরুরী যে আপনি এখন অনেক কিছুই জানেন বলে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু যখন আপনার ছেলে মেয়ে হবে তখন তারা আপনাকে সেকেলে ভাববে। তাদের ভাবাতে কি কিছু যায় আসে? আপনার যা জানার আপনার যা বোঝার আপনি তা ঠিকই বুঝেছেন!

ঠিক একই ভাবে নিজের বাবা মাকে সেকেলে ভেবে বসে থাকবেন না। এমন অনেক ব্যাপারই আছে যেগুলোতে তারা আপনার চেয়ে অনেক অনেক ভালো বোঝে। জীবনের বড় কোন সিদ্ধান্তও তাদের সাথে আলোচনা করে নিন। আপনার চেয়ে তারা অনেক ভালো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।

 

পরিশেষে বলব, বাবা-মা তাদের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আমাদের লালন পালন করেছেন। আমাদের অস্তিত্ব আছে তাদের জন্যেই। আজ আমরা যে যেই অবস্থানে আছি সবটুকুই তাদের কল্যানেই। তাই তাদের সুখটুকু দেখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমাদেরই। তাদের মুখে সর্বদা তৃপ্তির হাসি ফোটানো প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য। আমাদের সবার উচিৎ জীবনের সবটুকু দিয়ে এই কর্তব্য পালনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।


শেয়ার করুন

Leave a Comment