যে কোন ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সেরা উপায়। প্রথমত আপনাকে কিছু সাধারণ বিষয় জানাবো। সিদ্ধান্ত কি? উপায় কি? এবং সেরা উপায় কি।
- সিদ্ধান্ত হলো-দুই বা ততোধিক বিষয় থেকে একটি বিষয় পছন্দ করা।
- উপায় হলো-কার্যপ্রক্রিয়া।অর্থাৎ এই দুই বা ততোধিক বিষয় থেকে একটি বিষয় বাছাই কিভাবে করবেন।
- সেরা হলো-কোন উপায়টি আপনাকে সর্বোচ্চ ইতিবাচক ফলাফল দেবে।
এখন আসা যাক, যে কোন ক্ষেত্র বলতে আমরা কি বুঝি? জীবনের অনেক ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো হলো-
- ব্যক্তিগতজীবনে সিদ্ধান্ত
- শিক্ষাজীবনে সিদ্ধান্ত
- কর্মক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত
- অন্যান্যদের সিদ্ধান্ত
যা যা থাকছে
সিদ্ধান্ত নেবার সেরা কার্যকরী দশ উপায়ঃ
১) কে আছে আমি ছাড়া, আমাকে বাচায়ঃ
যে কোন কঠিন মুহুর্তে এই ম্যাজিক্যাল বাক্যটি নিজেকে বলুন, বারংবার নিজের মনকে স্মরণ করিয়ে দিন।অর্থাৎ, আপনার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র আপনাকেই নিতে হবে। নিজেকে অভয় এবং আত্মবিশ্বাস দিন।
২) সিদ্ধান্ত হীনতা বা সংশয় শব্দটিকে ডিলিট করে দিনঃ
নিজের ডিকশনারি তে যদি সংশয় নামক শব্দটি থাকে তবে তা ঠিক এই মুহূর্তে ডিলিট করে দিন।
আরো পড়ুনঃ ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি
৩) কিছু WH প্রশ্নেরঃ
উত্তর দিয়ে লক্ষ্য খুঁজে বের করুনঃ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো আপনার মনের ৭ টি WH প্রশ্ন।
a) কে? কে নয়?
b) কী? কী নয়?
c) কেন? কেন নয়?
d) কীভাবে? কীভাবে নয়?
e) কখন? কখন নয়?
f) কোথায়? কোথায় নয়?
g) কোনটি? কোনটি নয়?
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এবার লক্ষ্যকে উদ্দেশ্য করে সিদ্ধান্তকে কয়েক ভাগে ভাগ করুন। যেমনঃ
ধরা যাক, আপনি ডাক্তার হবেন নাকি ইঞ্জিনিয়ার, নাকি অন্য কিছু। এটি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। এখন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একটি ডাটা তৈরি করুন।
ডাক্তার আপনি কেন হতে চান? কেন চান না?
ইঞ্জিনিয়ার হলে ভবিষ্যৎ কি হতে পারে? কি না হতে পারে?
অন্যান্য কিছু হলে বেশি ভাল হবে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার থেকে?
কোনটা আপনার দ্বারা হওয়া সম্ভব এবং সহজ?
এভাবে উদ্দেশ্য সাজিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজেই ভাবুন।
৪) সিদ্ধান্তের ফলাফলের ছক তৈরি করুনঃ
প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য সকল ধরনের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক ফলাফল কি হতে পারে তার একটি ছক মনে মনে বা প্রয়োজনে কাগজে তৈরি করুন। অর্থাৎ, কোনটিতে লাভ এবং ক্ষতির পরিমাণ কেমন তা বুঝতে পারবেন।
৫) মন কে প্রাধান্য নয়, সুযোগ দিনঃ
এবার মনকে কথা বলার সুযোগ দিন,শুনুন সে কি বলে। সেটি মাথায় রাখুন। অনেকসময় আমাদের মন অর্থাৎ, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমাদের কে অনেক বিষয় সম্পর্কে আগেই সংকেত দেয়।যদিও তা সবসময় সঠিক হয় না। তাই মন কে শোনার এবং বোঝার চেষ্টা করবেন কিন্তু মন কে প্রাধান্য দেবেন না, একদমই। মনকে শুধু একজন সাজেশন দাতা হিসেবে গ্রহণ করবেন।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ১০টি প্রধান উপায়
৬) আবেগ বর্জনীয়ঃ
আবেগ কে বয়কট করুন। কারন আবেগ মানুষ কে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্রলুব্ধ করে। অনেকসময় আবেগের বশবর্তী হয়ে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। যদিও আমরা বুঝতে পারি যে সিদ্ধান্ত টি নেয়া ভুল হচ্ছে কিন্তু আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সে বুঝতে পারা খুব একটা কাজে দেয় না। আর জানেনই তো, আবেগ কোন যুক্তির ধারধারে না।
সুতরাং, আবেগ কে দূরে না সরিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া অসম্ভব।
৭) পরামর্শ গ্রহন করুনঃ
কাছের অভিজ্ঞ মানুষদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন যে, কী করলে সম্ভাব্য কি হতে পারে। তবে পরামর্শ কে কখনোই সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করবেন না। কারণ আপনার সিদ্ধান্তর ফলাফল একমাত্র ভুক্তভোগী আপনিই হবেন। সুতরাং, সিদ্ধান্ত নিজের হাতে রাখুন। যার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহন করবেন সে যেন নিরপেক্ষ ভাবে পরামর্শ দেয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
৮) মাথা ঠাণ্ডা রাখুনঃ
সিদ্ধান্ত গ্রহনের সাথে মাথা ঠাণ্ডা রাখার সম্পর্ক সমানুপাতিক। অর্থাৎ, মাথা যত ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্তের কথা চিন্তা করবেন, ভাল ফলাফল পাবার সম্ভাবনা তত বেশি। মাথা গরম করলে সমস্যার সমাধান তো খুঁজে পাবেনই না বরং সমাধান করার সময় টিও হারিয়ে ফেলবেন এবং দিনশেষে হতাশ হয়ে পরবেন।
আরো পড়ুনঃ মন ভাল করার ১০টি সেরা উপায়
৯) দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোর চেষ্টা করুনঃ
৪ এবং ৭ নং উপায় যোগ করে একটা উপসংহার টানার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ, কোন সিদ্ধান্ত আপনাকে সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল দিতে পারে।
১০) বিকল্প সিদ্ধান্ত রাখুনঃ
এটি আপনার হতাশা কে দূর করতে সহায়ক হবে। একটি সিদ্ধান্ত এত চিন্তাভাবনা করে নেবার পরও তা ভুল হতেই পারে। যদিও তা এক্সিডেন্ট। তাই এক বা একাধিক বিকল্প সিদ্ধান্ত রাখুন, যাতে একটি সিদ্ধান্ত ভুল হয়ে হতাশায় পরিণত হবার আগেই আরেক টি সিদ্ধান্ত কাজে লাগাতে পারেন।
সিদ্ধান্ত সেরা হবার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতাঃ
- একটি সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে খুব বেশি সময় নেবেন না। এতে করে প্রথমত মূল্যবান সময় হারাবেন এবং দ্বিতীয়ত আপনি সংশয়ে ভুগবেন।
- সিদ্ধান্ত এমনভাবে নেবেন না যাতে আপনার সুবিধে বা ক্ষতি কিছুই হলো না কিন্তু তা অন্যের কোন ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ালো। যা পরবর্তীতে আপনার মানসিক অশান্তির কারন হতে পারে।
- আনন্দিত বা রাগান্বিত মুহূর্তে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন।কারন, এসব সময় আমাদের মস্তিষ্কর যে সিরাম নিঃসৃত হয় তা আমাদের ভুল সংবেদন তৈরি করে।
- নিজেকে সিদ্ধান্তের যে কোন রকম ফলাফলের জন্য প্রস্তুত রাখুন। কারন যন্ত্রের ভুল হয় না, মানুষেরই হয়।সুতরাং, একটি সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে বলে আর কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না এমন চিন্তা থেকে বিরত থাকবেন।
- নিজের ক্ষমতা কে কখনো ছোট করে দেখবেন না। অর্থাৎ, আপনি যে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেটি ক্ষণিকের জন্যও ভুলে যাবেন না।
- সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে অন্যের ওপর নির্ভরশীল বা অতিরিক্ত মুখাপেক্ষী হবেন না। কারন আপনার সিদ্ধান্তের পরিস্থিতি আপনার মত করে কেউ বুঝবে না। সুতরাং, তাদের সিদ্ধান্তের সাজেশন হয়তোবা আপনার জন্য কার্যকরী ফলাফল নাও দিতে পারে।
এসব বিষয়গুলো একটু মাথায় রাখলে আপনার যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন সিদ্ধান্তই সহজ এবং ফলপ্রসূ হবে আশা করছি।
সর্বশেষ একটি কথা দিয়ে শেষ করবো। মনে রাখবেন, সিদ্ধান্তহীনতা ক্যান্সারের চেয়েও ক্ষতিকর। তাই সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ভুল হোক কিংবা সঠিক, নিজের ডাক্তার হিসেবে আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকেই নিয়োগ দিয়ে দিন। সফলতা আসবেই।