মন ভাল করার ১০টি সেরা উপায়

শেয়ার করুন

আমাদের প্রায় সবাই মন খারাপ নামক রোগে ভুগি। এ রোগে আক্রান্ত নয় এমন কোন ব্যাক্তি খুজে পাওয়া মুশকিল। কেননা এই যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। আমরা বেড়ে উঠছি নানান প্রতিযোগিতারর মাঝে। যেটা আমাদের স্বাভাবিক সুন্দর জীবনযাপন কেড়ে নিচ্ছে। সকালে চোখ খোলা থেকে শুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের একটাই চিন্তা, ক্লাসে ফার্স্ট হব কী করে, অফিসে সেরার সেরা হওয়ার অন্য কোনও উপায় আছে কী! ব্যবসায় আরো উন্নতি করবো কি করে? ইত্যাদি। এই সব নানান চিন্তা চলছে আমাদের ছোট্ট মাথায়। ফলে কোনও কোনও সময় মনের ক্লান্ত হয়ে পড়াটা মোটেও অবাক করার মতো ঘটনা নয়।

আর মন যখন ভাল থাকে না, তখন ঘুর পথে অবসাদন কখন যে আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে তা অনেক ক্ষেত্রে বোঝাই যায় থ্রি ইডিয়েট সিনেমার একটা সিন মনে আছে। যেখানে লবো নামের এক ছাত্র জীবন সংগ্রমে লড়ে উঠতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কী হয়েছিল তার, মনে আছে আছে কি? আমাদের সঙ্গে প্রায়শই যা ঘটনা ঘটে থাকে, তাই-ই হয়েছিল ২৩ বছর বয়সী ওই ছাত্রের সঙ্গেও। প্রথমে প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া। তার পর নানা কারণে পিছিয়ে পড়া। মানসিক চাপ, সেখান থেকে অবসাদ এবং মৃত্যু। তাই তো নিজেদের মনকে আগলে রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। না হলে কিন্তু বিপদ!

মন খারাপ থেকে দূরে থাকাটা সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত, নানা কারণে অবসাদের শিকার হতে পারে কেউ। যেমন- জীবনযাত্রা, কাজের চাপ, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, জেনেটিক কারণ এবং মস্তিষ্কে কেমিকেল ইমব্যালেন্স। এই লেখায় আলোচিত পদ্ধতিগুলি এইসব কারনগুলির প্রভাবকে কমিয়ে মনকে পুনরায় চাঙ্গা করে চুলতে দারুন কাজে আসবে। তাই তো মন খারাপ নামক সেই বিষাক্ত সাপটি আপনাদের দোরগোড়ায় আসার আগেই এই লেখাটি পড়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নিন। কে বলতে পারে কখন কী পরিস্থিতি এসে যায়!

 

 

নিচের ১০ টি উপায় সঠিকভাবে ধারন করলে মন খারাপ নামক উগ্র বিষয়কে আপনি সহজেই নিজের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে পারবেন।

যা যা থাকছে

১। হাসির অনুষ্ঠান দেখুন

মন ভালো রাখতে হাসির বিকল্প আর কিছুই নেই। হাসি এমন একটি জিনিশ যেটা আপনার শরীর চাঙ্গা করে তুলতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। হাসলে মন খারাপ জানালা দিয়ে পালাবে। তাই মন খারাপ থাকলে হাসার চেষ্টা করা অতিব জরুরী। কিন্তু মন খারাপ থাকলে তো আর শুধু হাসা যায় না, তাই না? এক্ষেত্রে আপনি হাসির অনুষ্ঠানমালা গুলো দেখতে পারেন। ড্রামা বা ট্রাজেডি সিরিজগুলা বাদ দিয়ে কমেডি সিরিজ দেখতে পারেন। এমন হাসির সিরিয়াল বা সিনেমা খুঁজে বের করুন যেটা পরক্ষনেই আপনার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। আবার পুরনো সিরিয়াল বা সিনেমা দেখতে পারেন আরও একবার। প্রিয় চরিত্রগুলোর মজার কান্ডকারখানা আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য সহায়তা করবে। এবং আপনি কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই আবিষ্কার করবেন যে আপনার মন খারাপ ভাবটা আর নেই। মন ফুরফুরে লাগছে।

 

২। মন ভালো করার গান

গান আমাদের সবারই একটি ভালো লাগার জায়গা। আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতেও গান মাঝে মাঝে ভূমিকা পালন করে। তাই মন খারাপ থাকলে নিজের প্রিয় গান শুনতে পারেন তাতে করে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। তবে মাথায় রাখতে হবে ‘স্যাড সং’ বা মৃদু লয়ের গান আপনার যতই প্রিয় হোক না কেন, মন খারাপ থাকলে এই ধরনের গান আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা আপনার মন খারাপ অবস্থায় স্যাড সং আপনার মন খারাপের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে, আগুনে ঘি ঢাললে যেমন আগুনের মাত্রা বৃদ্বি পায় ঠিক তেমন আরকি। তাই দ্রুত লয়ের মজার ও মন ভালো করা গানগুলো শোনার চেষ্টা করবেন। ভালো গান শোনার ফলে শরীরে ডোপামিন নামক একটি হরমন নিঃসৃত হয় যা মন ভালো করে তুলতে সাহায্য করে। আমার মতে সকালে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য অ্যালার্ম সেট করা হলে সেটিও হওয়া চাই মজার কোন গান বা মিউজিক। এতে ঘুম থেকে উঠতেও খুব বেশি কষ্ট হবে না।

 

আরো পড়ুনঃ একটু চিন্তা করে দেখুন আপনি অনেক ভাল আছেন

 

৩। প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন

মন খারাপের কারন নিজের মনের মধ্যে চেপে রাখলে ব্যাপারটা আরো কষ্টদায়ক হয়ে উঠে। মনে হয় হয় বুকে একটি পাথর চাপ দিয়ে রয়েছে। ক্রমেই সেই যন্ত্রনাটা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলশ্রুতি আমরা কষ্টটা পরিমানগত বেশি পেয়ে থাকি। অপর দিকে আমরা সবাই জানি যে মন খারাপের বিষয় অপরকে বললে নিজেকে হালকা লাগে। ভিতরে একটি প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। তাই পরিবার অথবা প্রিয় বন্ধুদের সাথে নিজের সমস্যা এবং মন খারাপের কারন খুলে বলুন। মানসিক চাপের বিষয়গুলো নিয়ে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কথা বললে নিজেকে হালকা মনে হবে। তাছাড়া কথা বলার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধানও বেরিয়ে আসে। যার ফলে মন ভালো হয়ে যাবে।

 

 

৪। পোষা প্রানীর সাথে সময় কাটান

আমাদের সকলেই নিজের পোষা প্রানীকে অনেক পছন্দ করি। আর পছন্দের কোন কিছুর সঙ্গে থাকলে আমাদের আর মন খারাপ ভাবটা থাকে না। কেননা তখন আমাদের মাইন্ডের রিওয়ার্ড সার্কিট সক্রিয় হয়ে যায় যার ফলে আমাদের আমাদের মন খারাপ ভাবটা কেটে যায়। তাছাড়া পোষ্য জন্তু মনেত ক্ষত ভরিয়ে দিতে দারুণভাবে সাহায্য করে। একাধিক গবেষনায় দেখা গেছে বাড়িতে পোষা জানোয়ার থাকলে তার খেয়াল রাখতে গিয়ে এতটাই সময় চলে যায় যে খারাপ চিন্তা করার অবকাশ পাওয়াই যায় না। ফলে মন খারাপ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রশঙ্গত, একট কেস স্টাডিতে এ কথাও প্রমাণিত হয়েছে যে, যাদের বাড়িতে পোষা মাছ রয়েছে তারা যদি মন খারাপের সময় তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে মানসিক অবসাদ অনেকাংশেই হ্রাস পায়।

 

৫। শখের কাজ করুন

মন খারাপ থাকা অবস্থায় আমাদের কাজ করার ইচ্ছেটা হারিয়ে যায় শুধু নিজের শখের কাজটা ছাড়া। এবং নিজের শখের বা পছন্দের কাজটি করলে মন খারাপ ভাবটা চলে যায়। এক্ষেত্রে ছবি আঁকা, গান গাওয়া, পছন্দের বাদ্যযন্ত্র বাজানো, বাগান করা ইত্যাদি আপনার যেকোনো পছন্দের কাজ বেছে নিতে পারেন শখ হিসেবে। তাছাড়া নতুন কোন খাবার তৈরী করতে পারেন পরিবারের জন্য। এধরনের কাজ একাধারে আপনাকে ব্যাস্ত রাখবে আবার আপনার মন খারাপও বিদায় হয়ে যাবে। তাই নিজের মন খারাপ হলে নিজের শখের কাজগুলো খুঁজে বের করে সেই কাজে লেগে পরুন। এর কারনে আপনার মানসিক অবসাদ দূর হয়ে যাবে।

 

আরো পড়ুনঃ হতাশা থেকে মুক্তির সেরা ১০টি উপায়

 

৬। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন

বর্তমানে মানুষের জীবন অনেকটাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক হয়ে উঠেছে। আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা না খেয়ে থাকতে পাড়লেও ১ ঘন্টা ফেইসবুক, ইউটিউবে না গিয়ে পারি না। এইটা ক্রমেই আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। সারাদিন কার কি করা হয়েছে বা কী চলছে সবই যেন সবাইকে জানানো চাই। এক্ষেত্রে অনেক সময় অন্যের জীবনযাপন দেখেও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে অনেকেই। মনে মনে ভাবতে থাকে ওর জীবন আমার জীবনের থেকে অনেক উন্নত, ও আমার থেকে কত বড়লোক, ও কত যায়গায় ঘুরতে যায়, কত ভালো ভালো রেস্টুরেন্টে খাবার খায় ইত্যাদি ইত্যাদি ভেবে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। জীবনের প্রতি অনিহা চলে আসে। তাই মন খারাপ থাকলে মন ভালো রাখার জন্য কিছু সময় এ ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

 

 

৭। ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম শুধু সুস্বাস্থের জন্যই যে কার্যকারী তা নয় মন ভালো রাখতেও ব্যায়াম বেশ উপযোগী একটি মাধ্যম। মাত্র পাঁচ মিনিট টানা ব্যায়াম করলে এন্ড্রোফিন নামক হরমন নিঃসৃত হয়। যা ১২ ঘন্টা মন ভালো রাখতে আপনাকে সহায়তা করে। আর এর জন্য যে জিমেই যাওয়া তেমন জরুরী নয়। ঘরে করা যায় এমন ব্যায়াম করলেও তা আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সহয়তা করবে। তাছাড়া অবসাদ দূর করার জন্য ব্যামের বিকল্প আর নেই। তাই মন ভালো রাখতে আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন যার ফলসরূপ আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন তেমনি মনও থাকবে চাঙ্গা।

 

৮। কাজে ব্যাস্ত থাকুন

কাজে ব্যাস্ত থাকলে মন খারাপ আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না। কেননা আমরা মন খারাপ তখনই করি যখন আমাদের কোন কাজ থাকে না আর সেই অবসর সময়য়ে আমরা ভাবনার সাগরে ডুব দেই। আর এই ভাবনার থেকেই বেড়িয়ে আসে নানান অপ্রাপ্তির তিক্ততার গল্প। আর তখনই আমরা মন খারাপ করে বসে থাকি। কিন্তু আমরা যদি এ সময়কে কোন কাজে নিজেকে নিয়জিত রাখি তাহলে এসব ভাবনা আমাদের মনে আসবে না, আসার সুযোগ নেই। কেননা তখন আমাদের চিন্তার সমস্ত কেন্দ্রবিন্দু থাকবে সেই কাজ। যার ফলে খারাপ চিন্তা ভাবনা মাথায় ঘুরে বেড়াবে না। এবং আমাদের মন খারাপের আশঙ্কা হ্রাস পাবে।

 

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন রাগ কমানোর কার্যকরী পদ্ধতি গুলো

 

৯। নিজেকে সময় দিন

ব্যস্ততার মাঝে অনেক সময়ই নিজের জন্য আলাদা সময় বের করা হয়ে ওঠে না। তাই নিজের জন্য আলাদা করে কিছুটা সময় বের করে নিন। নিজেকে সময় দিলে নিজের যত্ম নিলে আমাদের আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে যায় শতগুন। যার ফলে মন আপনা আপনিই ভালো থাকে সব সময়। এক্ষেত্রে মেয়েরা পার্লারে গিয়ে অয়েল ম্যাসাজ বা ফেইশল করিয়ে নিন। পার্লারে যাওয়ার সময় না হলে ঘরেই নিজের যত্ন নিন। নখে নতুন নেইলপলিশ লাগিয়ে নিন, ঘরোয়া ফেইসমাস্ক লাগিয়ে পছেন্দের গান শুনুন। আর ছেলেরা চাইলে আরামে শুয়ে বই পড়তে পারেন।যেটাই করুন না কেনো খেয়াল রাখুন সেটা যেন নিজেকে যত্ন করার বিষয় থাকে। তাহলে আপমার আত্মবিশ্বাসের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।

 

 

১০। নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকুন

নেতিবাচক মানুষ কখনো আপনার ভালো চাইবে না। তাদের মূল লক্ষ্যই হলো আপনাকে টেনে নামানো। এবং অপরের কাছে আপনার সমালোচনা করা। এই সমালোচনার প্রভাব আপনার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। যার ফলে আপমার মন খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আশেপাশের মানুষ যদি নেতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন হয় তাহলে তারা আপনার জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই তাদের এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা তখন আর মন খারাপ হবার কোন কারনও আপনি খুঁজে পাবেন না। যেহেতু কারনই নেই তাহলে মন খারাপ হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।


শেয়ার করুন

Leave a Comment