মনকে নিয়ন্ত্রণ করার ১০টি সেরা কৌশল

শেয়ার করুন

?cid=35523224

মন এমন একটি জিনিশ যেটার উপরর নির্ভর করে আমাদের সব কিছু। কেননা মন সায় না দিলে আমাদের কাজ করতে ইচ্ছে করে না। যে কাজে আমাদের মন বসে না সেই কাজ আর আমাদের দ্বারা হয়ে উঠে না। আর মনের বিরুদ্ধে কাজ করলে সেটা নিখুঁত ও হয় না।

কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যেই কাজগুলো আমাদের জীবনেত জন্য খুবই জরুরী বা এই কাজ না করলে আমাদের জীবনে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে সেই কাজ গুলোতেও আমাদের মন বেঁকে বসে আর এখানেই মূল সমস্যাটা তৈরী হয়। মনকে প্রশ্রয় দিয়ে সেই কাজগুলো থেকে আমরা পালিয়ে বেড়াই।

তাই আমাদের সেই মূল্যবান কাজগুলো করা হয়ে উঠে না, যার ফলে আমাদের জীবনে নেমে আসে নানা ধরনের সমস্যা।

তার উপর আমাদের মানসিক চাপ, কাজের চাপ, সম্পর্কের চড়াই-উতরাই ইত্যাদি আমাদের মনকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। এগুলাই হল মনকে বেঁকে দেয়ার মূল কারন। কিন্তু জীবনে উন্নতি করতে হলে নিজের মনকে নিজের আয়ত্তে বা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। কেননা বলা হয়, শারীরিক রোগের অনেক গুলোই হয় মানসিক রোগের কারণে।

এ ছাড়া মন বিক্ষিপ্ত থাকলে কাজকর্ম সব ব্যাহত হয়ে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে আপনি আয়ত্তে থাকা অবস্থাও নিজের নাগালের বাইরে চলে যাবেন ।

আর যা আয়ত্তে নেই, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে পরবে আরো মুশকিল। তাই আত্মনিয়ন্ত্রণ খুবউ জরুরি। নিজেকে সফল করার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ একটি বড় হাতিয়ার বলা যেতে পারে। আর নিজের মনকে যখন আপনি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবেন তখন আপনার অবচেতন মন চাইলেও তার ইচ্ছা মত আপনাকে কন্ট্রোল করবে না বরং আপনিই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করবেন।

তখন যে কাজটা আপনার জীবনের জন্য জরুরী সে কাজকে ফাঁকি দিতে মন আপনাকে উৎসাহিত করতে পারবে না। তখন আপনি আপনার মনকে নিজের কন্ট্রোলে রেখে কাজগুলো সম্পাদন করতে পারবেন এবং আপনার লক্ষ্য ব্যাহত হবে না। ফলশ্রুতি আপনার জীবন সাফল্যের স্বাদ গ্রহন করবে সর্ব ক্ষেত্রেই।

মন নিয়ন্ত্রন করা রাতারাতি কোন বিষয় না। নিচের ১০টি কৌশল সঠিকভাবে নিয়মিত পালন করলে আপনিও আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

যা যা থাকছে

১। মেডিটেশন

মনকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে মেডিটেশনের বিকল্প আর কিছু নেই। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধ্যান বা মেডিটেশন করা খুব উপকারী একটি বিষয়। যখন নেতিবাচক চিন্তাগুলো মনে আসে তখন মানসিক দৃঢ়তা কমে যায়।

এই ধরনের চিন্তা মানসিক শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। মানসিকতা দুর্বল হয়ে গেলে আমাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। আর আমরা জানি আত্মবিশ্বাস একবার হারিয়ে গেলে কাজের অনুপ্রেরণা থাকে না। তখনই অই কাজের উপর আমাদের অনিহা চলে আসে। কাজটি করতে আর আমাদের মন বসে না।

ফলে আমাদের সেই কাজটি অসম্পন্ন থেকে যায়। আর আমরা সাফল্যের করিডরের খুব কাছাকাছি এসেও আমরা ব্যর্থতার তকমা কপালে দেই।

কিন্তু নিয়মিত মেডিটেশনের অভ্যাস মনকে শান্ত করে এবং দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। আর মন ঠিক থাকলে অনুপ্রেরণার ঘাটতি থাকে না। তাই মনকে শান্ত রাখতে মেডিটেশন করুন।

২। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

এটা হয়ত আমাদের প্রায় মানুষই জানি যে মনকে শিথিল রাখতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বিষণ কার্যকারী একটা মাধ্যম। নানা চাপের কারনে আমাদের মন প্রায়শই বিক্ষিপ্ত থাকে।

এই চাপ হতে পারে আপনার সংসারের চাপ, পড়ার চাপ, কাজের চাপ ইত্যাদি। আর এই চাপের কারনে মাঝে মাঝে বেচে থাকার আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। জীবনের প্রতী একটা বিরূপ ধারনা পোষিত হয়।

আর চাপ নিয়ে কাজ করলে সেই কাজ কখনই ভালো হয় না, এ কথা আমাদের অজানা নয়। তাই আপনার মন ভীষণ বিক্ষিপ্ত এবং অস্থির থাকলে একে নিয়ন্ত্রণের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। এই ব্যায়াম করতে প্রথমে গভীরভাবে শ্বাস নিন। কিছুক্ষণ আটকে রাখুন।

এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার ধরে করুন। এই ব্যায়াম আপনাকে শিথিল করতে সাহায্য করবে। নেতিবাচক চিন্তা ও আবেগগুলো থামাতে সাহায্য করবে। এবং যার ফলে আপনি আপনার কর্ম ক্ষেত্রে ভালো করতে পারবেন এবং জীননটাকে সুন্দর মনে হবে।

৩। চিন্তাকে চিহ্নিত করুন

আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হওয়ার মূল কারনই হচ্ছে আমাদের নানা ধরনের নেতিবাচক চিন্তা। কোন কাজে হাত দিলেই সেই কাজের ফলাফল বা নানা বিষয় নিয়ে আমরা নেতিবাচক চিন্তার আসর খুলে বসি। ধীরে ধীতে এসব চিন্তা আমাদের মধ্যে বাসা বাধা শুরু করে তখনই আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

বিচলিত হয়ে পরে তার ফলে আমাদের অনুপ্রেরণা হারিয়ে যায় আর বেলা শেষে সেই কাজ আমাদের দ্বারা হয়ে উঠে না আর উঠলেও ফলাফল আমাদের আশানুরূপ হয় না।

তাই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে যে চিন্তাগুলো আপনাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করুন। নেতিবাচক চিন্তাগুলো বারবার মনে এলে অকারণেই অস্থির হয়ে উঠবেন। তাই প্রথমে চিন্তার উৎসটা খুঁজে বের করুন।

এরপর ভাবনাগুলোকে একেবারে থামিয়ে দিন। ইতিবাচক চিন্তা করা শুরু করুন। ভাবুন আপনার জীবনে ইতিবাচক কী কী দিক রয়েছে। এ ছাড়া ইতিবাচক বিষয়গুলোর একটি তালিকাও তৈরি করতে পারেন।

নেতিবাচক চিন্তাগুলো যখন মাথায় আসবে, তখন ইতিবাচক চিন্তার সেই তালিকাটি দেখুন। তাতে করে আপনার মন শান্ত হবে।

৪। মনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যান

উপরের পয়েন্টে আগেই বলেছি যে আমাদের মকে বিক্ষিপ্ত করে তোলে আমাদের নেতিবাচক ভাবনাগুলো। আর যার ধ্বংস করার শক্তি অত্যান্ত প্রবল।

এসব চিন্তা আমাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি অনুভব করার আর সাথে সাথে অনুপ্রেরণার বিন্দু ছক কাগজের তলানিতে এসে ঠেকে। আর যেই কাজে আত্মবিশ্বাস আর অনুপ্রেরণা নামক মূল খুটিই নেই সেই কাজেত পরিণতি আপনি আমি ভালো করেই জানি।

তাই যদি আসলেই মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান তবে নেতিবাচক ভাবনাগুলো থেকে মনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যান। মন খারাপ হওয়ার পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসুন।

কোনো কিছু খুব বেশি সমস্যার মনে হলে বা কষ্টদায়ক হলে, কিছু সময়ের জন্য বিষয়টিকে এড়িয়ে যান। অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিন। তাতে করে আপমার মনের উপর বিরূপ প্রভাব পরতে পারবে না।

এবং আপনার মনকে প্রভাবিত করতে পারবে না। ফলে আপনার মন আপনার নিয়ন্ত্রনেই থাকবে।

৫। সংগীত থেরাপি

গান আমাদের সবারই একটি ভালো লাগার জায়গা। আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতেও গান মাঝে মাঝে ভূমিকা পালন করে। তাই মন খারাপ থাকলে নিজের প্রিয় গান শুনতে পারেন তাতে করে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।

তবে মাথায় রাখতে হবে ‘স্যাড সং’ আপনার যতই প্রিয় হোক না কেন, মন খারাপ বা চাপে থাকলে থাকলে এই ধরনের গান আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে।

শান্ত ও মন ভালো করা গানগুলো শোনার চেষ্টা করবেন। ভালো গান শোনার ফলে শরীরে ডোপামিন নামক একটি হরমন নিঃসৃত হয় যা মন ভালো করে তুলতে সাহায্য করে।

এটা চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শিথিল হওয়ার মিউজিকও শুনতে পারেন।

৬। মোমের আলোয় তাকান

খুব অস্থির লাগলে এবং কষ্ট লাগলে মোমের আলোর দিকে তাকাতে পারেন। মোমবাতি জ্বালিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকুন। যতক্ষণ পর্যন্ত আলোকে স্থির মনে না হবে, ততক্ষণ তাকিয়ে থাকুন।

এটি করলে আপনার মন শান্ত হবে। এবং নিয়মিত আপনি এটা করলে আপনার মনযোগ শক্তি বৃদ্ধি হবে। কেননা এটা আপনাকে একদিকে মন স্থির করা সেখাবে এবং বার বার মন ডিস্ট্রাকের হাত থেকে চিন্তাশক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

এ ছাড়া আপনার খুব অস্থির লাগতে থাকলে আপনি গোসল করতে পারেন। শরীরে পানির পরশ মনকে শান্ত করতে সাহায্য করবে।

৭। আশাবাদী হয়ে উঠুন

আশাবাদী হয়ে উঠলে এটা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর খোরাক হয়ে উঠে। আমাদের অনুপ্রেরণাকে বাচিয়ে রাখে। আপর দিকে আশা ছেড়ে দিলে হতাশা আমাদের গ্রাস করে। আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে তার শক্তিশালী পর্দা দিয়ে। যা ভেদ করে বেরোনোটা কষ্টসাধ্যই বটে।

এবং এই হতাশা খুব সহজেই আমাদের মনকে অস্থির করে তোলে। এবং এর প্রকোপ আস্তে বাড়তেই থাকে। তখন কোন কাজে আমরা নিজেদের সেরাটুকু দিতে পারি না।

আর ক্রমেই আমরা ব্যর্থতার রাস্তায় প্রেরিত হই। তাই হতাশার কারনগুলোকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিজেত পজেটিভ দিকগুলোর দিকে নিজর দিন, আশাবাদী হয়ে উঠুন।

আর মনে রাখবেন জীবনে উত্থান-পতন আসবেই, আর অশান্ত হলে সামনে এগুনো যাবে না। আর এই কথাটা যদি মনকে বোঝাতে পারেন তাহলেই মন সব সমই শান্ত থাকবে।

৮। পর্যাপ্ত ঘুমান

পর্যাপ্ত ঘুম সব শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সমাধানের একটি অন্যতম উপায়। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের সকলেরই প্রয়োজন। শুধু মনকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেই নয় সকল ক্ষেত্রেই।

ঘুমটা ঠিক মত না হলে আমাদের সকল কাজেই ব্যাঘাত ঘটে। সারাদিন আলসেমি লাগে, শরীরে বিরক্তি কাজ করে এবং মন বিক্ষিপ্ত থাকে। কোন কাজেই মন বসতে চায় না।

কাজটি ফেলে রাখার একটি তারনা আমাদের মধ্যে দেখা যায়। যার ফলে আমাদের কর্মক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চাপে থাকা অবস্থায় আপনি যদি না ঘুমান আপনার মন আরো বিক্ষিপ্ত হবে।

এজন্য এ সময় অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো খুব জরুরি।

৯। মানবিক চর্চা করুন

মানবিকতা শুধু এক্ষেত্রেই শুধু দরকার তা নয় এটা জীবনের প্রত্যেক ধাপেই আপনালে সাহায্য করবে। যারা অমানবিক কার্যক্রমে লিপ্ত তারা কখনই সাফল্যের শীর্ষচূড়ায় অবতরণ করতে পারেননি।

তার আগেই ঝরে পরেছেন। অন্যদিকে যারা শান্তি, উদারতা, মানবিকতার পথ ধরে যারা নিজ নিজ লক্ষ্যে এগিয়ে যান তারা সহজে বিচলিত হন না। তারা বেলাশেষে সাফল্যের স্বর্নশিখড়ে পৌঁছে যান।

তাই নিজের ভিতরে মানবিকতার গুনাগুন গুলো ধারন করুন, ক্ষমাশীল হোন। দেখবেন নিজের আগেব, অনুভূতি এবং মনের উপর আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

১০। হাসুন

সব প্রশ্নের খুব ভালো উত্তর হলো হাসি। মন ভালো রাখতে হাসির বিকল্প আর কিছুই নেই। হাসি এমন একটি জিনিশ যেটা আপনার শরীর চাঙ্গা করে তুলতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।

হাসলে মন খারাপ জানালা দিয়ে পালাবে। তাই খুব বেশি চাপে থাকলে হাসার চেষ্টা করা অতিব জরুরী। কিন্তু রাজ্যের চাপ যখন মাথায় থাকবে তো আর এমনি এমনি হাসা যায় না, তাই না? এক্ষেত্রে আপনি হাসির অনুষ্ঠানমালা গুলো দেখতে পারেন।

ড্রামা বা ট্রাজেডি সিরিজগুলা বাদ দিয়ে কমেডি সিরিজ দেখতে পারেন। এমন হাসির সিরিয়াল বা সিনেমা খুঁজে বের করুন যেটা পরক্ষনেই আপনার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।

আবার পুরনো সিরিয়াল বা সিনেমা দেখতে পারেন আরও একবার। প্রিয় চরিত্রগুলোর মজার কান্ডকারখানা আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য সহায়তা করবে। এবং সব চাপ নিমিষেই কেটে আপনার মন ভালো হয়ে উঠবে। এবং মন যখন ভালো থাকবে জেনে রাখবেন মন তখন আপনার বসে।

বিডি মোটিভেটর – ভাল কিছুর সাথে সবসময়।


শেয়ার করুন

Leave a Comment