দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার ১৩টি সেরা টিপস

শেয়ার করুন

পৃথিবী শুরু হয়েছিল শুধু একজন মানব কে দিয়ে। তিনি হলেন হযরত আদম (আঃ)। তাকে একা পৃথিবীতে পাঠানোর পর সৃষ্টিকর্তা তাঁর জন্য একজন সঙ্গীর প্রয়োজনবোধ করলেন এবং তাঁর জোড়া হিসেবে জুড়ে দিলেন বিবি হাওয়া কে। সুতরাং মানুষের সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা সেই আদিমযুগ থেকেই লক্ষ্য করা যায়। যখন একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা একসাথে বসবাস শুরু করে তখন এই নতুন জীবন কে নামকরণ করা হয় দাম্পত্যজীবন।

দাম্পত্যজীবন অনেকটা তেল জলের সম্পর্কের মত। তেল ও জলে কখনো মিশ না খেলেও তাদের দুয়ের কম্বিনেশনে তৈরি হয় অসাধারণ সুস্বাদু কোন আইটেম। অর্থাৎ একজন পুরুষ ও মহিলা আলাদা বৈশিষ্ট্যর হলেও তাদের কম্বিনেশনে সৃষ্টি হয় দাম্পত্য নামক নতুন মজাদার সম্পর্ক।

দাম্পত্যজীবন তৈরির কথা তো জানা গেলো কিন্তু এ জীবন কে সুন্দর ও মধুর করে রাখতে হলে তো কিছু উপায় মাথায় রাখতেই হবে। তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায়।

 

যা যা থাকছে

১। একে অপরের বন্ধু হবার চেষ্টা করুনঃ

দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই দুজন মানুষের মধ্যে বন্ধুভাবাপন্ন মানসিকতা তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন বন্ধু আপনাকে যতটা ভাল বুঝতে পারবে সেটা অন্যকেউ বুঝতে পারবেনা। আর একজন বন্ধুর কাছেই মানুষ তার ভালোলাগা, মন্দলাগা, ভয়, অভিমান, প্রত্যাশার কথা, সমস্যার কথা নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে পারে।

 

২। সঙ্গী কে সম্মান ও শ্রদ্ধা করুনঃ

দাম্পত্য জীবনে বর্তমানে যে সমস্যা টি বেশি দেখা যায় তা হলো সম্মানের অভাব। যার কারনে সৃষ্টি হয় মতভেদ। আর তা বাড়তে বাড়তে বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে দেখা যায়। স্বামী স্ত্রী দুজনেরই উচিৎ একে অপরকে মানুষ বা বন্ধু হিসেবে শ্রদ্ধা করা। শ্রদ্ধাবোধ যে কোন সম্পর্ককে আরও নতুন মাত্রা দেয়। কখনো এমন কোন কথা বলবেন না বা কাজ করবেন না যা অন্য ব্যক্তি মানুষটার আত্মসম্মানে আঘাত করে। প্রত্যেক মানুষেরই নিজের কাছে তার আত্মসম্মান বোধ রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ একটি চমৎকার ভাইভা পরীক্ষার সঠিক গাইডলাইন

 

৩। সঙ্গীর মতামত কে প্রাধান্য প্রদান করুনঃ

সবসময় নিজের মতামত কে জাহির করা এবং তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। প্রত্যেক মানুষেরই কিছু ইচ্ছে বা মতামত থাকতে পারে। এ সত্য কে ভুলে গেলে চলবে না। মাঝেমাঝে পরিস্থিতি ভেদে অন্যের মতামত শুনুন এবং মূল্যায়ন করার চেষ্টা করুন। ফলে অপর পাশের মানুষটি যখন বুঝতে পারনে যে তার মতামত ও গুরুত্ব পাচ্ছে তখন সেও আপনার কথার মূল্যায়ন করার চেষ্টা করবে। আবার অনেকসময় এমনও দেখা যায় যে, কোনকোন ক্ষেত্রে আপনার মতামত থেকে অপর মানুষটির মতামত বেশি উত্তম এবং যৌক্তিক।

 

৪। নিজেদের মধ্যে শেয়ারিং বাড়ানঃ

দাম্পত্য জীবনে সবচেয়ে কাছের মানুষ টি হলো স্বামী বা স্ত্রী। তাই দুজন দুজনার ভালোলাগা, মন্দ লাগা, জীবনের ভাল সময় খারাপ সময়,ভাল মুহূর্ত খারাপ মুহূর্ত তার সাথে শেয়ার করুন এতে করে পরিস্থিতি অনুযায়ী একে অপরকে বুঝতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।

 

৫। সন্দেহ নামক ক্যান্সার কে ছড়াতে দেবেন নাঃ

সন্দেহ ক্যান্সার থেকেও ভয়ানক রোগ। যা একবার মন কে গ্রাস করলে যে কোন সুন্দর কোনকিছু কে মুহূর্তেই ধুধু মরুভূমি করে দিতে পারে।
সন্দেহ নামক শব্দ টিকে সিলগালা করে রাখার চেষ্টা করুন। আর যদি সন্দেহ জীবনে প্রবেশ করেই ফেলে তবে চেষ্টা করুন সন্দেহের বিষয় নিয়ে কথা বলার মধ্যে সেটি যত দ্রুত সম্ভব দূর করার চেষ্টা করুন। সন্দেহ কে জিয়িয়ে রাখবেন না।

৭। SACRIFICE করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রাখুনঃ

Sacrifice শব্দটি ছাড়া শুধু দাম্পত্য সম্পর্ক নয়,যে কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, সুন্দর রাখা অসম্ভব । দাম্পত্য জীবনে সবকিছু আপনার মন মত হবে বা আপনার সাপোর্টে থাকবে এমনটি সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে জেদ ধরে বসে না থেকে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিন। নিজের ইচ্ছে বা মতামত কে মাঝেমাঝে sacrifice করুন। ফলাফল স্বরূপ যে কোন সমস্যার সমাধান হবে, সেইসাথে আপনার জন্য অন্যকারোর মধ্যে sacrifice করার মানসিকতা তৈরি হবে।

 

৮। বিশ্বাস তৈরি করুন এবং সঙ্গী কে বিশ্বাস করুনঃ

দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়াটা নির্ভর করে বিশ্বাস কতটা শক্ত তার অপর। বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। বিশ্বাস ছাড়া বছরের পর বছর একই ছাদের নিচে বসবাস করার পরও দেখা যায় দুজনার মধ্যে প্রচুর বিশ্বস্ততার অভাব রয়েছে। কিন্তু তারা সংসার করছে কেবল সম্মানহানি হবে বলে এবং বিশৃঙ্খলার ভয়ে অথবা ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। এভাবে কি আর সুখে সংসার করা সম্ভব! এজন্য নিজেদের বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিশ্বাসের ভিত্তি মজবুত করে নিন।

 

৯। নিজেদের সমস্যা সমাধান নিজেরাই করুনঃ

সমস্যাহীন কোন মানুষ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং দুজন মানুষ যখন দিনের পর দিন একই ছাদের নিচে থাকবে তখন তাদের মধ্যে নানা রকম ব্যাপার নিয়ে সমস্যা তৈরি হবে এটাই বাস্তব। দুজনে সরাসরি খোলামেলা আলোচনা করে সমাধান করুন।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে নিজেকে আবিষ্কারের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা যায়

 

১০। ভুল স্বীকার করার মানসিকতা রাখুনঃ

মানুষ মাত্রই ভুল হবে। সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এমন কখনো মাথায় গেঁথে রাখবেন না যে, আমি কখনো ভুল করতে পারি না। ভুল বোঝাবুঝির দেয়াল বাড়তে দেবেন না। নিজের ভুল বুঝতে পারার সাথে সাথেই তা স্বীকার করে ফেলুন এবং দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলুন।

 

১১। সারপ্রাইজ দেবার চেষ্টা করুনঃ

দাম্পত্যজীবন মধুর করার ক্ষেত্রে সারপ্রাইজ ম্যাজিকের মত কাজে দেবে।

যেমনঃ চিরকুটে কোন রোম্যান্টিক বাক্য, বা চিঠি, অথবা গোলাপ, চক্লেট অথবা সঙ্গীর পছন্দের খাবার রান্না, সঙ্গীর জন্মদিন, দুজনের দেখা হবার প্রথম দিন, যে কোন প্রথম দিন, বিবাহবার্ষিকী, ভালবাসা দিবস সহ যে কোন দিবসে সঙ্গীর পছন্দের জিনিস উপহার দিয়ে চমকে দিতে পারেন।
দিনক্ষণ মনে রাখতে প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ডায়েরী ব্যবহার করুন।

 

১২। মাঝেমধ্যে কোলাহল থেকে মুক্তি নিনঃ

প্রতিদিন একই রুটিন, আমাদের মন কেও কাঠখোট্টা করে তোলে। যান্ত্রিক জীবন থেকে মাঝেমধ্যেই সুযোগ করে সঙ্গী কে নিয়ে সামর্থ্যানুযায়ী দেশের বাইরে বা ভেতরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। এর ফলে আপনার মধুর মুহূর্ত বাড়বে যা আপনাদের সম্পর্কের ভাল থাকার ফুয়েল হিসেবে কাজ করবে।

 

১৩। ছোট ছোট মুহূর্ত কে উৎযাপন করুনঃ

ছোট ছোট মুহূর্ত উৎযাপন করুন। যেমনঃ বর্ষার কোন দিনে সঙ্গীকে হাতে একগুচ্ছ কদমফুল দিয়ে তার হাত ধরে হাটতে পারেন, অথবা কোন জোছনা ভরা রাত কাটাতে পারেন ছাদে বসে চাঁদ দেখে, নিজের অথবা সঙ্গীর যে কোন ছোট বড় সাফল্য কে উৎযাপন করতে পারেন। এতে সম্পর্কে নতুন প্রানের সঞ্চার হবে।

এসব উপায় গুলোর যথাযথ প্রয়োগ যদি কেউ দাম্পত্যজীবনে করতে পারে তবে তার থেকে সুখী দম্পতি আর কেউ হবে না নিশ্চিত থাকুন। আশা করছি, উপায় গুলো আপনাদের দাম্পত্যজীবনে উপকারে আসবে। আপনার উপকার ই আমার কাম্য।


শেয়ার করুন

Leave a Comment